খালেদার বক্তব্য মিথ্যার ফুলঝুড়ি: প্রধানমন্ত্রী

সাম্প্রতিক ইন্দোনেশিয়া সফর নিয়ে আজ বেলা ৪টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি- ফোকাস বাংলাগুলশানে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে মিথ্যার ফুলঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত করলেন প্রধানমন্ত্রী। রবিবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি সুলিখিত বক্তব্য পাঠ করেছেন। চমৎকারভাবে মিথ্যার ফুলঝুড়ি ছড়িয়ে গেছেন।’

সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ দুপুর ২টার দিকে গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অংশ নেন খালেদা। তিনি অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তার নেতাকর্মীদের তার পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে। খালেদার বক্তব্যের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী এ প্রতিক্রিয়া জানান।

সাম্প্রতিক ইন্দোনেশিয়া সফর নিয়ে আজ বেলা ৪টায় গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলেও প্রশ্নোত্তর পর্বে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় সিটি নির্বাচনও উঠে আসে।

জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত হরতাল-অবরোধে নাশকতায় মানুষ হত্যার ঘটনাগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে মানুষ যেভাবে পোড়াল, যে জঘন্য কাজ, বিশ্বে কোথাও কি কেউ দেখেছে?’

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, ‘উনি যে মানুষকে পোড়ালেন তিনি আবার মানুষের কাছে ভোট চান কিভাবে? কোন মুখে ভোট চান? লজ্জাও তো লাগে।’

খালেদা জিয়া নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার চালালেও তা গণমাধ্যমে আসেনি বলে সমালোচনাও করেন তিনি।

নির্বাচনী প্রচারে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার ছবি সংবাদ মাধ্যমে এলেও বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তাকর্মীদের গাড়ির নিচে চাপা পড়া এক তরুণের ছবি সংবাদ সম্মেলনে দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ছবি তো আপনারা দেখাননি।’

এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী (সিএসএফ)’র এক কর্মী অস্ত্র হাতে গুলি করার ছবি সহ বেশ কিছু ছবি সংবাদ সম্মেলনে দেখান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া জনতার রুদ্ররোষেই পড়েছিলেন।

---প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর দেশকে যেভাবে বিশ্বের কাছে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছি এর আগে কি অবস্থা ছিল ? খালেদা ‍জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিল তখন মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ভাঙচুর করা হয়। দুর্নীতির কারণে দেশে বিনিয়োগ বন্ধ ছিল। বাংলাদেশে কেউ আসতে ভয় পেত। আমাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।’

হাওয়া ভবনের দুর্নীতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হাওয়া ভবনে কমিশন না দিলে ব্যবসা হবে না। তাই দেশে ব্যবসা হয়নি। দুর্নীতির কারণে বিদেশি বিনিয়োগ চলে গেছে। তার ছেলে যে দুর্নীতিবাজ তা আমেরিকার ফেডারেল কোর্ট ও সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। তার আমলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির এমন অবস্থা হয় যে ১/১১ এসেছিল।’

খালেদার জিয়া রাজনৈতিক সমঝোতা চাওয়ার যে কথা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আমি ফোন করেছিলাম, উনি ছয় ঘণ্টা পর ফোন ধরলেন, উনার যে কথা, আমার এই জীবনে এই রকম মুখ ঝামটা, ঝাড়ি আর খাইনি। উনার ছেলে মারা গেল, আমি গেলাম সহানুভূতি জানাতে। আমি গেলাম, আমি নামতে পারলাম না, উনার গেটে তালা। আমাকে ঢুকতে দিল না, ভেতরে অনেক লোকজন ছিল, একটুকু ভদ্রতাও তো দেখায়নি।’

সমঝোতার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা, খালেদা জিয়ার কথা কে বিশ্বাস করবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের ভুয়া বিবৃতি এবং ভারতের বিজেপি প্রধান অমিত শাহের ফোনালাপের প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনার মিথ্যাচারের কথা কী বলব! দেশের ভেতরে তো মিথ্যাচার করেই যাচ্ছেন, বিদেশিদেরও ছাড় দেননি। মিথ্যা কথা উনি চমৎকারভাবেই বলতে পারেন।’

ভোটারদের অর্থ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে খালেদার বক্তব্যের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উনি অর্থ নেওয়াটা ভালো বোঝেন। ক্ষমতায় থাকতে অর্থ নিয়ে গেছেন। অর্থ নেওয়া, বেঈমানি করাটা উনার স্বভাব।’

এর আগে নিজের লিখিত বক্তব্যে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত নেপালের পাশে থাকার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা নেপালের পাশে থাকবো। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আজও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। আমরা আশা করি, আমাদের দেশে যেন এ ধরনের দুর্যোগে জনগণের জানমালের ক্ষতি না হয়।’

সাম্প্রতিক ইন্দোনেশিয়া সফর নিয়ে আজ বেলা ৪টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।উল্লেখ্য, গত ২১ থেকে ২৩ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশিয়ান দ্বিতীয় সম্মেলনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। দেশটির রাজধানী জাকার্তায় অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে ৩৪টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ ১০৫টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সম্মেলনের ফাঁকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী রামি হামিদাল্লাহ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা এবং কাতারের উপপ্রধানমন্ত্রী আহমেদ আবদুল্লাহ জেড আল-মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।

এ ছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লংয়ের সঙ্গেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় অংশ নেন। সম্মেলনের একটি প্লেনারি সেশনে মিসরের প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম মেহলাবের সঙ্গে যৌথভাবে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সফর শেষে বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।


আলোচিত বিভাগের আরো খবর...
শেখ হাসিনাকে নিয়ে ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন শেখ হাসিনাকে নিয়ে ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
শিরমাল রুটি শিরমাল রুটি
ঢাকায় রবীন্দ্রনাথ ও বুড়িগঙ্গা ঢাকায় রবীন্দ্রনাথ ও বুড়িগঙ্গা
৩০০ আসনে মহাজোটের প্রার্থী যারা ৩০০ আসনে মহাজোটের প্রার্থী যারা
বিদেশি পর্যবেক্ষক আনতে অন অ্যারাইভাল ভিসা বিদেশি পর্যবেক্ষক আনতে অন অ্যারাইভাল ভিসা
আ. লীগের যেসব হেভিওয়েট নেতা মনোনয়ন পাননি আ. লীগের যেসব হেভিওয়েট নেতা মনোনয়ন পাননি
গণফোরামে যোগ দিলেন আ’লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ গণফোরামে যোগ দিলেন আ’লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ
ঘোষণা ছাড়াই মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দিচ্ছে বিএনপি ঘোষণা ছাড়াই মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দিচ্ছে বিএনপি
আ. লীগের মনোনয়ন পেলেন যেসব তারকা আ. লীগের মনোনয়ন পেলেন যেসব তারকা
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যারা পেলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যারা পেলেন

খালেদার বক্তব্য মিথ্যার ফুলঝুড়ি: প্রধানমন্ত্রী
(সংবাদটি ভালো লাগলে কিংবা গুরুত্ত্বপূর্ণ মনে হলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।)
tweet