‘আশা করি, ভদ্রভাবে কোর্টে গিয়ে স্যারেন্ডার করবেন’

বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। (ছবিতে) সহিংসতার আগুনে নিহত প্রতিবন্ধী সেলিনা বেগমের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ ও আরথিক অনুদানের চেক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘ভদ্রভাবে’ আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। “আইন-আদালত মানবেন। আপনার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে। আশা করি, ভদ্রভাবে কোর্টে গিয়ে স্যারেন্ডার করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অন্যথায় জনগণ তাকে ছেড়ে দেবে না এবং তিনি জনগণের সামনে যেতে পারবেন না।’”

অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি এ কথা বলেন।

জিয়া ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি হয়। ওই দুই মামলার পরের শুনানির দিন ৪ মার্চও খালেদা আদালতে না যাওয়ায় জারি করা পরোয়ানা বহাল রাখা হয়।

ওই পরোয়ানা গুলশান থানায় পৌঁছালেই খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে আগের দিন (বুধবার) সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান হরতাল, অবরোধ ও অগ্নি হামলায় নিহত ৪ জনের পরিবার ও আহত ৩৩ ব্যক্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত ১৯৯টি বাস-ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনের মালিকের হাতে ৫ কোটি ৪২ লাখ ৮ হাজার টাকার চেক তুলে দেন।

ধ্বংসাত্মক রাজনীতি বন্ধে খালেদা জিয়ার প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী বাংলাদেশকে ধ্বংসের পথে নিতে চান।

শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া আইন-আদালত কিছুই মানেন না। ওনার দুর্নীতির মামলার ৬৭ বার হাজিরার তারিখ ছিল। কিন্তু উনি মাত্র ৭ দিন আদালতে গিয়েছেন। অধিকাংশ দিন আদালতে হাজির না হয়ে উনি মূলত আদালত অবমাননা করেছেন। এছাড়া বিএনপি নেত্রী তার ক্যাডারদের নিয়ে আদালতে গিয়ে আদালতের কাছে আইনজীবীদের লাঞ্ছিত করে ও গাড়ি পুড়িয়ে আদালতের মর্যাদা ক্ষুণ্ণের চেষ্টা করেছেন।

মানুষ পুড়িয়ে হত্যার জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্রের তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওদের মানবিক কোন অনুভূতি নেই। ওরা মানুষের অভিশাপে ধ্বংস হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত চক্র আড়াই মাস ধরে হরতাল ও অবরোধ দিয়ে এবং অগ্নি হামলার মাধ্যমে জনগণের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। এই চক্রের নৃশংস হামলায় অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। অনেকে পঙ্গু এবং অনেকে নিঃস্ব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট পেট্রোল দিয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষকে হত্যা করেছে। মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো মর্মান্তিক ঘটনা আর কিছু নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের নিজেদের জন্য রাজনীতি করছে। জনগণের জন্য নয়। তারা জনগণ এবং পরিবারের পাশাপাশি দেশ ধ্বংস করছে। তারা এ ধরনের ধংসযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে।

প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোটের হামলায় অগ্নিদগ্ধ এক শিশুর ৩৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গতকাল মারা যাবার ঘটনার উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, কি অপরাধ করেছিল এই শিশুটি। বিএনপি-জামায়াত কেন নিরীহ মানুষদেরকে এভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক অফিসে বসে মানুষ পুড়িয়ে মারতে দলের কর্মীদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমি জানি না, তার ছেলে বিদেশে থেকে যখন ধংসত্মক কর্মকান্ডের নির্দেশ দিচ্ছে। তখন তিনি তার গুলশানের অফিসে বসে কি করছেন।

প্রধানমন্ত্রী এসএসসি পরীক্ষার সময়ে হরতাল দেয়ার উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত পরীক্ষা না হতে দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তারা পরীক্ষার্থীদের জীবন ধ্বংস করতে চায়। এটি কি ধরনের কাজ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত দিনের পর দিন হরতাল দিয়ে সাধারণ মানুষদেরকে পথে বসাচ্ছে। খালেদা জিয়ার যতক্ষোভ জনগণের বিরুদ্ধে। তার একমাত্র লক্ষ্য জনগণের সর্বনাশ করা।

শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের ধংসাত্মক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা এভাবে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা আর সহ্য করব না। জনগণের শক্তি বড় শক্তি। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রতিরোধ করব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই না এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটুক। আমরা দেশের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে চাই। আমরা চাই, প্রতিটি লোক শান্তিতে বসবাস করবে।

প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, এটি আনন্দের বিষয়, জনগণ এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তারা সন্ত্রাসীদেরকে আটক করে গণপিটুটি দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করছে।

প্রধানমন্ত্রী এর আগে হরতাল, অবরোধের সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ২৭০টি যানবাহনের মধ্যে ১৯৯টি গাড়ি মালিককে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৮ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ৩৩ জন অগ্নিদগ্ধের এবং নিহত ৪ জনের পরিবারের সদস্যদের প্রত্যেককে দশ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র প্রদান করেন।

পাশাপাশি প্রতিবন্ধী সেলিনা বেগম এবং আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া সোহাগের মা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র পেয়েছেন। এছাড়া পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা দেবে।

প্রধানমন্ত্রী হরতাল, অবরোধের সময়ে হতাহত লোকদের পরিবারের সদস্যদেরকে এবং ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহন মালিকদেরকে ১৪ কোটি ৬২ লাখ ৭২ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, এলজিআরডি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক, পিএমও সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারি একান্ত সচিব-২ সাইফুজ্জামান শিখর।


ছবি ঘর বিভাগের আরো খবর...
শেখ হাসিনাকে নিয়ে ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন শেখ হাসিনাকে নিয়ে ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
শিরমাল রুটি শিরমাল রুটি
ঢাকায় রবীন্দ্রনাথ ও বুড়িগঙ্গা ঢাকায় রবীন্দ্রনাথ ও বুড়িগঙ্গা
৩০০ আসনে মহাজোটের প্রার্থী যারা ৩০০ আসনে মহাজোটের প্রার্থী যারা
বিদেশি পর্যবেক্ষক আনতে অন অ্যারাইভাল ভিসা বিদেশি পর্যবেক্ষক আনতে অন অ্যারাইভাল ভিসা
আ. লীগের যেসব হেভিওয়েট নেতা মনোনয়ন পাননি আ. লীগের যেসব হেভিওয়েট নেতা মনোনয়ন পাননি
গণফোরামে যোগ দিলেন আ’লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ গণফোরামে যোগ দিলেন আ’লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ
ঘোষণা ছাড়াই মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দিচ্ছে বিএনপি ঘোষণা ছাড়াই মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দিচ্ছে বিএনপি
আ. লীগের মনোনয়ন পেলেন যেসব তারকা আ. লীগের মনোনয়ন পেলেন যেসব তারকা
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যারা পেলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যারা পেলেন

‘আশা করি, ভদ্রভাবে কোর্টে গিয়ে স্যারেন্ডার করবেন’
(সংবাদটি ভালো লাগলে কিংবা গুরুত্ত্বপূর্ণ মনে হলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।)
tweet